সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার বাড়ছে

. . কোন মন্তব্য নেই:

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইন্টারনেট বিজ্ঞাপনের বাজার। বিশ্বব্যাপী নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পণ্যের প্রসারের জন্য অন্য যে কোনো মাধ্যমের চেয়ে ইন্টারনেটকেই আগে বেছে নিচ্ছে। পিছিয়ে নেই অন্যসব প্রতিষ্ঠানও। সবার চোখ এখন অনলাইনের দিকে। মজার ব্যাপার, অংকের হিসেবে উন্নত বিশ্বে মুদ্রিত কাগজের বিজ্ঞাপনকে এরই টেক্কা দিয়েছে অনলাইন বিজ্ঞাপন। এখন তাই সবারই চোখ অনলাইনের দিকে
একদিকে প্রতিদিন যেমন বাড়ছে ইন্টারনেট বিজ্ঞাপনের সংখ্যা, অন্যদিকে বাড়ছে এ বিজ্ঞাপনের খরচও। ২০১৭ সালের মধ্যে এ বিজ্ঞাপনের বাজার বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে। এর বিপুল চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পরিবর্তিত হচ্ছে অনলাইন বিজ্ঞাপনের ধরনও।

বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন বিজ্ঞাপন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি মেরিন সফটওয়্যারের গবেষণা থেকে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইট ও সার্চ ইঞ্জিনে তাদের যে বিজ্ঞাপন দেয়, সেগুলো কতোটুকু কার্যকর হচ্ছে, কি পরিমাণ গ্রাহক এসব বিজ্ঞাপন দেখে পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন- সে ব্যাপারে বিজ্ঞাপনদাতাদের জানায় মেরিন।

মেরিন সফটওয়্যার প্রধান নির্বাহী ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস লিয়েন জানান, সার্চ, ম্যাপ, অ্যাপ, অগমেন্টেড রিয়েলিটির (গুগল গ্লাস) মতো সেবাগুলোয় বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের পণ্যের দিকে আকৃষ্ট করে বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গুগল। পাশাপাশি এসব সেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারী সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য তারা বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করে। এর উপর নির্ভর করে অনেক বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন দেন। এসবে ভোক্তারা কতোটা আকৃষ্ট হচ্ছেন, কতোজন ভোক্তা ওই পণ্যটি কিনছেন, বিজ্ঞাপনগুলো আদৌ কতোটা কার্যকর হচ্ছে- তার হিসাব-নিকাশ রাখাই মেরিনের কাজ। ফলে অনলাইন বিজ্ঞাপন বাজারের খুঁটিনাটি ও ভোক্তাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তাদের কাছে রয়েছে।

এর উপর ভিত্তি করেই লিয়েন মনে করেন, খরচ বাড়ার পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে অনলাইন বিজ্ঞাপনের মানও বাড়বে। এগুলো ব্যক্তিভিত্তিক ও আরও বেশি ইন্টারঅ্যাকটিভ হবে। অর্থাৎ, বিজ্ঞাপনদাতারাও ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত প্রয়োজন, চাহিদা, আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারবেন। এ ধরনের বিজ্ঞাপনকে বলা হয় ওয়ান-টু-ওয়ান বিজ্ঞাপন। এটি পুরোদমে চালু হলে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার আরও বেশি কার্যকর ও প্রসারিত হবে।

শুধু বিজ্ঞাপন ট্র্যাকিংয়ের এই কাজ করেই পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে মেরিন সফটওয়্যার। বর্তমানে ১৬০টিরও বেশি দেশের ১ হাজার ৯শ’টি কোম্পানির ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি অনলাইন বিজ্ঞাপন ম্যানেজমেন্টের কাজ করছে তারা।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজারে নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান গুগল। তাদের শেয়ার মূল্য ইতোমধ্যেই ৮০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তাদের বিপুল মুনাফার সিংহভাগ আসে অনলাইন বিজ্ঞাপন থেকে। ২০১২ সালে শুধু এই খাত থেকেই তাদের আয় হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

এছাড়া মাইক্রোসফট, ফেসবুকের মতো কোম্পানিগুলোও অনলাইন বিজ্ঞাপনে গুগলের সঙ্গে পাল্লা দিতে গড়ে তুলেছে নিজস্ব অ্যাড প্ল্যাটফর্ম। ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিজ্ঞাপন তৈরিতে তারা বিনিয়োগ করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত চাহিদা, রুচি ইত্যাদির উপর নির্ভর ওয়ান-টু-ওয়ান বিজ্ঞাপন চালু করেছে ইতোমধ্যেই, যা দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে।

ক্রিস লিয়েন আরও জানান, আকর্ষণ নির্ভর এ অর্থনীতির বিকাশ মাত্র শুরু হয়েছে। এটি আরও বহুদূর যাবে। ফেসবুকের পর ইউটিউবেরও ১০০ কোটি ব্যবহারকারীর মাইলফলকে পৌঁছানো যার উদাহরণ।

১৯৯৪ সালে হটওয়্যারড নামে একটি ওয়েব ম্যাগাজিন তাদের সাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে অনলাইন বিজ্ঞাপনের যাত্রা শুরু করেছিল। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এর বাজার পৌঁছায় ৭১০ কোটি ডলারে। দ্বিতীয় প্রজন্মের ওয়েব সার্ভিস ‘ওয়েব ২.০’ চালু হওয়ার পর ২০০৪ সালের দিকে নতুন করে গতি পায় ইন্টারনেট বিজ্ঞাপন। এসময়ই দ্রুতগতিতে এই বাজারের শীর্ষে পৌঁছায় গুগল, তাদের বাজার মূল্য ২ হাজার ৯শ’ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০০৭ সালের শেষে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৫শ’ কোটি ডলারে।

২০০৭ সালের পর থেকে অনলাইন বিজ্ঞাপনে নতুন নতুন মাত্রা যোগ হতে থাকে। স্মার্টফোন, ফেসবুকের মতো সামাজিক মিডিয়া, ইউটিউবের মতো ভিডিও প্ল্যাটফর্মের আগমনে এটি গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সমপর্যায়ে চলে আসে। এমন সময়ই বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, যেমন- নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউজউইক, ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, টাইম ইত্যাদি অত্যাধুনিক এই বিজ্ঞাপন বাজারের দিকে আকৃষ্ট হয়। সনাতন বিজ্ঞাপনের বদলে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার দখল করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসময় ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও অনলাইন বিজ্ঞাপনের জন্য আরও উন্নত প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, ট্র্যাকিং সফটওয়্যার, ইউজার অ্যানালাইসিস সফটওয়্যার ইত্যাদি নিয়ে আসতে থাকে সেবাদাতারা, যার কল্যাণে অন্য যে কোনো মাধ্যমের চেয়ে অনেক সহজে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় অনলাইন।

এসবের ফলাফল হিসেবেই ২০০৯ সালের পর থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক বিজ্ঞাপনের বিপরীতে টানা শক্তিশালী অবস্থানে থেকেছে অনলাইন বিজ্ঞাপন। ইতোমধ্যে এর বাজার প্রিন্ট বিজ্ঞাপনের বাজারকে পেছনে ফেলেছে।

মেরিন সফটওয়্যারের মতো সম্পূর্ণ অনলাইন বিজ্ঞাপনভিত্তিক কোম্পানিগুলোর মতে, অনলাইন বিজ্ঞাপনের এ জয়যাত্রা থামার নয়। বিজ্ঞাপনের জগতে অনলাইন যে পরিমাণ বৈচিত্র্য ও গ্রহণযোগ্যতা এনেছে, তা অন্য কোনো মাধ্যম আনতে পারেনি। এছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে গ্রাহকদের সম্পর্কে সহজে তথ্য সংগ্রহ, তা বিশ্লেষণ করে পণ্যের প্রচার, প্রসার সম্ভব নয়। একইসঙ্গে সম্ভব নয় নতুন নতুন সফটওয়্যার ও আপগ্রেড ব্যবহার করে গ্রাহকের চাহিদা মতো বিজ্ঞাপনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন, নতুন মাত্রা দেওয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

ফেসবুকে আমরা

জনপ্রিয় পোষ্ট সমূহ

পূরানো পোষ্টসমূহ

Blogger দ্বারা পরিচালিত.